ঢাকা , শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫ , ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
কোনো দলের প্রতি সেনাবাহিনীর আলাদা নজর নেই : সেনা সদর সর্দি-জ্বরে জর্জরিত দেশ আগামী নির্বাচন প্রতিটি নাগরিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ: তারেক রহমান দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের সিদ্ধান্ত কিশোরগঞ্জ ভেঙে বাজিতপুরকে জেলায় রূপান্তরের দাবি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় অনুমোদনে চরম অনিয়ম আউটসোর্সিং খাতের নীতিমালা সংশোধনের দাবি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে বদলে যাচ্ছে ট্রেনের সময় কার্যকর ১০ আগস্ট ফেনীতে হাসিনা-নিজাম হাজারীসহ ২২১ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট মৌলভীবাজারে সেপটিক ট্যাংকে নেমে যুবকের মৃত্যু ঢামেকে ভুয়া চিকিৎসক সেজে রোগীর সঙ্গে প্রতারণায় আটক ২ ১০ দিনে বাসার দখল নিতে হবে সরকারি চাকরিজীবীদের থানায় ঢুকে ‘মব’ সৃষ্টি : তিনজন কারাগারে গণতন্ত্র চর্চা করলে সমাজের বৈষম্য হ্রাস পায়-উপদেষ্টা নওগাঁয় হত্যা মামলায় দু’জনের মৃত্যুদণ্ড ও ধর্ষণ মামলায় দু’জনের যাবজ্জীবন নওগাঁ সীমান্ত দিয়ে ১০ জনকে বিএসএফের পুশ ইন সংঘবদ্ধ চক্রের হাতে জিম্মি ডেসটিনি সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি বাণিজ্য-বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করবে : ঢাকা চেম্বার সার কারখানা চালু রাখতে বন্ধ করতে হচ্ছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিবর্তন আসছে সরকারি কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনায়
* ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে এগোচ্ছে * সরাসরি ভোটে ৭ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী রাখার প্রস্তাব কমিশনের

সবাইকে ছাতার নিচে আনতে ভিত গড়ছে ঐকমত্য কমিশন

  • আপলোড সময় : ৩১-০৭-২০২৫ ০৭:১০:০৭ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ৩১-০৭-২০২৫ ০৭:৩৪:২১ অপরাহ্ন
সবাইকে ছাতার নিচে আনতে ভিত গড়ছে ঐকমত্য কমিশন
প্রায় ছয় মাস ধরে রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্দেশে ঐকমত্য কমিশনে রাজনীতিকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে অনেক সুখ-স্মৃতি, সৌহার্দ্য-আন্তরিকতার অনেক উপকরণ। এখানে ছোটখাটো কিছু বাদানুবাদের পরও অংশগ্রহণকারীরা বলছেন, সবাই ‘এক ছাতার’ নিচে সমবেত হয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে সামনে এগিয়ে নেয়ার যে উদাহরণ তৈরি হয়েছে, তা কেবলই সোনালি দিনেরই জানান দেয়। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর দলাদলি-সংঘাতের বদলে এখানে সহমর্মিতা, পরমতসহিষ্ণুতার যে চর্চা শুরু হলো তা আগামী দিনের রাজনীতিকে দিশা দেখাবে।
সর্বশেষ গতকাল বুধবার ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চলমান সংলাপে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে। তিনি বলেন, কমিশনের আলোচনার জন্য এজেন্ডায় রাখা হয়েছে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব, সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রণ এবং ন্যায়পাল সংক্রান্ত বিধান। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব, রাষ্ট্রপতির নির্বাচন পদ্ধতি ও ইলেক্টোরাল কলেজ ইত্যাদি। ড. আলী রীয়াজ বলেন, আপনারা যে দায়িত্ব আমাদের দিয়েছেন, তার মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। আমরা চেষ্টা করছি এসব বিষয়ে দ্রুত ঐকমত্যে পৌঁছাতে। বৃহস্পতিবারের মধ্যেই আপনাদের অবহিত করতে পারব। তিনি বলেন, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব সংক্রান্ত আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে এবং এ বিষয়ে একটি লিখিত খসড়া অংশগ্রহণকারী দলগুলোর কাছে তুলে দেওয়া হবে। তবে, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়নি। নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ সংক্রান্ত প্রস্তাব আলাদাভাবে অংশগ্রহণকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে সব দল মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণের নীতিগত অবস্থানে একমত হয়েছেন। তবে, সংবিধানে এই বিষয়ে কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে, তা নিয়ে কিছু ভিন্নমত রয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, আজকের মধ্যে আমরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে যেসব বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে, তার একটি তালিকা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পৌঁছে দেব। আশা করছি আগামীকাল আমরা একটি সমন্বিত ও গ্রহণযোগ্য খসড়া সনদ সব দলের কাছে তুলে দিতে পারব। আলোচনার গতি বাড়াতে দলগুলোর সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, যেমনটি আপনারা শুরু থেকেই করে আসছেন, তেমন সহযোগিতার ধারাবাহিকতা আমরা আশা করছি। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব নিয়ে প্রস্তাব এখনও প্রস্তুত না হলেও বাকি বিষয়গুলোতে দ্রুত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর লক্ষ্যে আলোচনা চলছে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন আলী রিয়াজ।
জানা গেছে, দুর্যোগ এলে ভুক্তভোগী সবাই। গত সোমবার দেশের প্রায় সবকটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের হুড়োহুড়ি, কারণ হঠাৎ ফায়ার এলার্ম বেজে উঠেছে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে। বিপদের প্রশ্নে যে এক থাকতে হবে, ঐকমত্য কমিশনে রাজনীতিকদের মধ্যে সৌহার্দ্যরে এমন স্মৃতি তৈরি হয়েছে প্রতি মুহূর্ত, যদিও রাজনীতির মাঠে বক্তব্য বিবৃতিতে তাদের কত দূরত্ব, আদর্শে কত ভিন্নতা! উদাহরণ দিয়ে বলতে গেলে, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ আর জামায়াত নেতা আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, এমনভাবে হেসে কথা বলেন যে দেখে বোঝার উপায় নেই প্রায়সময়ই তারা রাজনীতিতে একে অন্য দলকে সমালোচনা করে বক্তব্যও রাখছেন। সত্য কথা বলতে, রাজনৈতিক বিরোধিতা। কিন্তু তারপর পাশাপাশি বসে দুই দণ্ড কথা বলার ফুরসত, এমন সৌহার্দ্যই তো দেখতে চেয়েছে এদেশের মানুষ। তবে শুধু যে সম্পর্কের এই ধরন বদলেছে তা-ই নয়, এমন কিছু দৃশ্যও দেখা যাচ্ছে যেটা কিছুদিন আগেও মনে হতো অকল্পনীয়। যেমন বামপন্থী দলগুলোর, ইসলামপন্থী দলের সঙ্গে একসঙ্গে বসা। তাদের মধ্যে হয়তো মৈত্রী বা জোট গড়ে উঠছে না কিন্তু একসাথে এক বৈঠকে বসা তো হলো। নতুন বাংলাদেশে সব দল, সব ধর্ম আর মত একসঙ্গে বাঁচবে এটাও তো বড় পাওয়া।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আপনি চাইলেই কি বিভিন্ন মতাদর্শের রাজনৈতিকদের বাংলাদেশ থেকে বের করে দিতে পারবেন? আপনি কি সমুদ্রে তাদের নিক্ষেপ করবেন? তাহলে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের মধ্যে নানা চিন্তা মতাদর্শের মানুষ থাকবে, ভিন্নমত থাকবে, এটাই তো স্বাভাবিক। বরং এতদিন যেটা অনুশীলন হয়েছে, সেটা একেবারেই একটা চর দখলের সংস্কৃতি ছিল। ভিন্নমত বা দ্বিমত করা মানে, আপনি হয়তো আমার রাজনৈতিক প্রতিযোগী হবেন কিন্তু নিশ্চয়ই আপনি আমার শত্রু না। সুতরাং এখন যেটা চর্চা করছি, এটাকেই ফিরিয়ে আনা দরকার।
আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, স্বাধীনতার পর এখনই একমাত্র প্রান্তিক দলগুলোও- ডান, বাম, ইসলামিস্ট, স্যাকুলার সব শ্রেণির মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর সঙ্গে এখানে একত্রে বসার একটা সুযোগ হয়েছে। আমি মনে করি, এটা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য বড় পাওয়া।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এটা অবশ্যই একটা ঐতিহাসিক ঘটনা। স্বাধীনতার পরবর্তীকালে যেহেতু স্বাধীনতার যে মূলমন্ত্র, সেটা জাতি অর্জন করতে পারেনি, পরিপূরণ করতে পারেনি। যে প্রস্তাবগুলো ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত হচ্ছে সেটা বাস্তবায়ন হলে, অবশ্যই আমরা আমাদের কাক্সিক্ষত, আমাদের শহীদের রক্তের আকাক্সক্ষা এবং প্রত্যাশা অনুযায়ী রাষ্ট্র, সমাজ কাঠামো এবং সরকারব্যবস্থা বিনির্মাণ করতে পারবো। তাই বলে যে ঐকমত্য কমিশনের পুরো সময়টাই বন্ধুত্বের গল্প তেমনটাও নয়। তীব্র বাদানুবাদ হয়েছে, সভা ছেড়ে বেরিয়ে গেছেন কোনো কোনো দল, কখনও কখনও মনোমালিন্য কিংবা হতাশাও দেখিয়েছেন কেউ কেউ। কিন্তু এত দিনের এই বৈঠক, দিনব্যাপী যুক্তিতর্ক, হাসি-ঠাট্টা, খুনসুটি- সবমিলিয়ে দলগুলোর মধ্যে কি একটু পারিবারিক আবহ তৈরি হয়নি? আর অবশেষে যখন এই মিলনমেলা শেষ হচ্ছে, তখন কী অবচেতনে হলেও মনের মধ্যে কোনো বেদনা টের পাচ্ছেন কেউ কেউ।
এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, চিফ জাস্টিস কে হবে? আমরা সব দল মিলে চা খেতে খেতে ঠিক করতে পানি কি না? প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে হবে? দুদকের চেয়ারম্যান কে হবে? এটা আমরা ঠিক করতে পারি কি না? এই ন্যাশনাল ইন্টারেস্টের জায়গায় যদি জাতি একমত হতে পারে তাহলে জাতি অনেক স্ট্রং হবে। আমাদের দেখে বাইরে যারা জনগণ প্রতিদিন আমাদের দেখছে তারা জাতির লিডারশিপের ওপর অনেক বেশি কনফিডেন্স পাবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, কারও দলীয় যে পজিশন তার বাইরেও একটা পজিশন নেয়া ঐকমত্যের স্বার্থে। সেগুলোকেও অপারেট করার মতো একটা আন্তরিক পরিবেশ আমরা এখানে দেখেছি। সব থেকে বড় কথা হলো বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি যেখানে হানাহানি, বিদ্বেষ, মারামারি এবং প্রতিহিংসা পরায়ণতার যে রাজনীতি, তার বাইরে এসে ছোট হোক, বড় হোক, নতুন দল হোক বা পুরোনো দল হোক। সব দল যে আমরা একসঙ্গে কথা বলতে পারছি এটা আমাদের ইতিহাসে একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে। এ কয়দিনে সবুজে ঘেরা শান্ত ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্যস্ততা ছিল প্রতিটি ফ্লোরে, ক্যান্টিন, লাউঞ্জ কিংবা প্রতিটি হলরুমে। নিয়ম করে আগত অতিথিদের জন্য স্ন্যাক্স, দুপুরের খাবার এসব নিয়েও ব্যস্ততা ছিল তাদের নিয়ম করে। নামাজের জায়নামাজ কিংবা খাবারের টেবিলেও রাজনীতিকদের আরও কাছে এসে জানাশোনার সুযোগ তৈরি হয়েছে, জমেছে অনেক স্মৃতি।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বলেন, যখন এই অভ্যুত্থান সফল হলো তখন এরকম একটা দৃশ্য আমার স্বপ্ন ছিল যে, একটা বড় রকমের সংস্কারের আলোচনা হবে এবং সেখানে গোটাজাতির আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে। ঠিক সে স্কেলে না হলেও এটা অনেক ব্যাপক একটা আয়োজন। ব্যাপক একটা আলোচনার ফোরাম। সেই ফোরামের মধ্য দিয়ে একটা নতুন গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার পথে এরইমধ্যে অনেক কিছু অর্জনের ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি।
এ বিষয়ে সিনিয়র সানবীর রূপল বলেন, নিজের কাছে একটু অন্যরকম লাগছে যে আবার হয়তো মারামারি, কাটাকাটির দিকে, দলাদলির দিকে তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে রাজনীতির মাঠে দেখবো। কিন্তু একসঙ্গে চা খেতে দেখার যে একটি আন্তরিকতা, সেটি যেমন দেশ যেমন মিস করবে, আমরা যারা সাংবাদিকরা এখানে কাভার করছি তারাও দীর্ঘদিন এই বিষয়টি মিস করবো। একই কথা বলেছেন একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার রাজনৈতিক প্রতিবেদক রাজীব আহাম্মদ। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের একবছরে যত কাজ হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ। বাইরে অনেক রকম প্রশ্ন রয়েছে যে, কী সংস্কার হচ্ছে? রাস্তাঘাট তো সব আগের মতো, অফিস-আদালত সবকিছু আগের মতোই। আসলে এটি ঐকমত্য কমিশন বা সরকার, বা রাজনৈতিক দলগুলো বা সংবাদ মাধ্যম, সবাই যে জিনিসটি সাধারণ মানুষকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে, এখানে কতটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য খুবই ভালো যে একজন আরেকজনের কাথা শুনছে। সংস্কার যতটুকুই হোক এগুলো কিন্তু নোটে থাকছে। পাঁচ, দশ বছর পর গিয়ে যদি এগুলো না করেন তাহলে প্রশ্ন আসবে যে আপনি এগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কিন্তু এগুলো বাস্তবায়ন করছেন না। আপনি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছেন। দু’এক দিনের মধ্যেই হয়তো পর্দা টানা হবে রাষ্ট্র সংস্কারের আকাক্সক্ষা নিয়ে আয়োজিত অন্তর্বর্তী সরকারের এই মহা মিলনমেলা। আগামীর বাংলাদেশ নীতিতে, স্বচ্ছতায়, নিরপেক্ষতায় যতবার অর্জনের সিঁড়ি অতিক্রম করবে, ততবার হয়তো স্মরণ করা হবে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী মিনি সংসদখ্যাত এই ফরেন সার্ভিস একাডেমিকে।
এদিকে বিদ্যমান সংরক্ষিত ৫০ নারী আসন বহাল এবং সরাসরি ভোটে ৭ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়ার সংশোধিত প্রস্তাব করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ২২তম দিনে সংশোধিত প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হয়। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে ১০০ আসনে সরাসরি নারীদের নির্বাচনের কথা বলা হয়। নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে ১০০ নারী আসনে সরাসরি ভোটের কথা বলা হয়। এনসিপি ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে ১০০ আসনের সরাসরি ভোট চেয়েছে। সিপিবি, বাসদ, জেএসডিও সরাসরি ভোটের কথা বলেছে। তবে, জামায়াতসহ ধর্মভিত্তিক দলগুলো সংখ্যানুপাতিক হারে ১০০ আসনে নারী নির্বাচনে কথা বলেছে। অন্যদিকে বিএনপিসহ সমমনারা বিদ্যমান পদ্ধতিতে ১০০ সংরক্ষিত আসনের প্রস্তাব করেছে। এ অবস্থায় কমিশন গত ১৪ জুলাই সংশোধিত একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করে। সেখানে বলা হয়— যে দল ২৫টির বেশি আসনে মনোনয়ন দেবে, সেখানে তারা ন্যূনতম এক-তৃতীয়াংশ আসনে নারীদের মনোনয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। ওই দিন কমিশনের ওই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে অধিকাংশ দল। এরপর আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন আহমেদ বিদ্যমান ৫০ সংরক্ষিত আসন রাখার পাশাপাশি ৫ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী রাখার প্রস্তাব করেন। যা আগামী নির্বাচনে বাস্তবায়ন হবে। পরবর্তী সময়ে ১৪তম সংসদ নির্বাচনে ১০ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী রাখার প্রস্তাব করেছে দলটি। এদিন নতুন প্রস্তাব উপস্থাপন করে কমিশন। সেখানে বলা হয়, জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ক্রমান্বয়ে ১০০ আসনে উন্নীত করা হবে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৫-এর দফা (৩) এ প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে বিদ্যমান সংরক্ষিত ৫০টি আসন বহাল রেখে প্রতিটি রাজনৈতিক দল জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ স্বাক্ষরের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে ৭ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন প্রদান করবে। ১৪তম জাতীয় নির্বাচনে ১৫ শতাংশ আসনে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রত্যেক রাজনৈতিক দল নারী প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবে। রাজনৈতিক দলসমূহ এই হার পর্যায়ক্রমে প্রতি সাধারণ নির্বাচনে ৫ (পাঁচ) শতাংশ হারে বৃদ্ধি করে সংসদে সরাসরি নির্বাচনে নারীদের মনোনয়নের মাধ্যমে নারীদের প্রতিনিধিত্ব ১০০-তে উন্নীত করবে। পঞ্চদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো পর্যাপ্ত সংখ্যক নারীদের মনোনয়ন প্রদান করবে যাতে ১০০ জন নারী জাতীয় সংসদে সরাসরি নির্বাচিত হবেন।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের সপ্তদশ সংশোধনীর (যা ৮ জুলাই ২০১৮ সালে সংসদে পাস হয়) মাধ্যমে সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ ২৫ বছর বৃদ্ধি করা হয়। সেই হিসেবে বিদ্যমান নারী আসনের মেয়াদ আগামী ২০৪৩ সাল পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে বিধান আছে। তবে, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৫(৩) ও (৩ক)-এর আওতায় সংরক্ষিত নারী আসনের বিধান চতুর্দশ সংসদের পর আর কার্যকর থাকবে না।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স